- আজ রবিবার
- ২৯শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
- ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
- ১৫ই মহর্রম ১৪৪৭ হিজরি
গাজীপুর টিভি ডেস্ক | ০৭ মার্চ ২০২২ | ৩:৩৭ অপরাহ্ণ
তৎকালীন রেসকোর্স, এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এ ময়দান থেকেই একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দেন সংগ্রামের, সবাইকে অধিকার আদায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। কিন্তু গোটা জাতিকে একাত্ম করার সঙ্গে জড়িত ঐতিহাসিক এই উদ্যানের— বিশেষ করে সেই মঞ্চটির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ এখনও অবহেলিত। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর স্থানগুলো চিহ্নিত করা হলেও তা সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে ২৫ জুন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থান ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানটি সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। এক বছর পর দেওয়া রায়ে আদালত ভাষণের স্থানসহ মোট ৭টি স্থান সংরক্ষণ ও স্বাধীনতা পরবর্তী নির্মিত কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে না এমন স্থাপনা সরাতে আদেশ দেন। পাশাপাশি রায়ে উদ্যানের ওই অংশটিকে ‘স্বাধীনতা উদ্যান বা লিবার্টি স্কয়ার’ করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান।
কিন্তু রায় ঘোষণার এক যুগ পরও দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফাইল চালাচালিতেই কেটেছে ১২টি বছর। রায় বাস্তবায়নে সমস্যা হলে আদালতে পুনরায় নির্দেশনা চাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে ঐতিহাসিক স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
রায়ে যে স্থানগুলো চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দেওয়া ভাষণের স্থান; ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণের স্থান; একাত্তরের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের শপথের স্থান; ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থান; পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান; ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান এবং ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের স্থান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে মহা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্থান এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানসহ সাতটি ঐতিহাসক স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সেখানেও এখনও কোনও ফলক বা স্তম্ভ বসানো হয়নি।
জানা গেছে, জাতির পিতার ভাষণের স্থানে একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হবে। থাকবে শিশুপার্কও। পুরো উদ্যানটি নিয়ে নেওয়া হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আমরা এরই মধ্যে স্থানগুলো চিহ্নিত করেছি। বর্তমান শিশুপার্কেই এর অবস্থান। এজন্য নকশাও চূড়ান্ত হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনেক ইতিহাস। যা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ জাতিসত্ত্বার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের জায়গায় শিশুপার্ক বানিয়েছিলেন। আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানটিকে মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে সংরক্ষণ করতে চাই। এজন্য নতুন করে শিশুপার্ক সাজানো হচ্ছে। যেখানে ছোট-বড় সবাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবে।
জানতে চাইলে শিশুপার্কের প্রকল্প পরিচালক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, ‘৭ই মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরের স্থান দুটি পার্কের ফোয়ারার পাশে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্থানগুলো নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করছে। যতদূর জানি এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তির নকশা চূড়ান্ত হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক কোন জায়গায় আত্মসমর্পণের কাগজে সই হয়েছিল তা অনেকেরই অজানা। উদ্যানে গিয়েও জায়গাটি খুঁজে পাওয়ার উপায় নেই।
সরেজমিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, এখনও আদালতের রায় বাস্তবায়নের বিন্দুমাত্র লক্ষণ নেই।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক শাহরিয়ার কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক সুনির্দিষ্ট স্থানগুলো নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য জিয়াউর রহমান সেখানে শিশুপার্ক তৈরি করেন। যা ছিল পরিকল্পিত। বিষয়টি তার এক ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকের লেখা একটি বইতে রয়েছে। কিন্তু আদালত থেকে নির্দেশনা আসার পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে। যতদূর জানি এরই মধ্যে স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।’