- আজ রবিবার
- ৭ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
- ২০শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
- ১৯শে শাওয়াল ১৪৪৬ হিজরি
গাজীপুর টিভি ডেস্ক | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | ৮:২৬ অপরাহ্ণ
পহেলা বৈশাখের তাপপ্রবাহের বিকেলে গরম খবর ছড়িয়ে পড়লো দেশের আনাচে কানাচে – ফিফা দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগকে।
কাগজপত্র জালিয়াতির দায়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। পরবর্তী দুই বছর ফুটবল সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানাও করা হয়। তবে ফিফার এই শাস্তিকে অবৈধ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক।
শুক্রবার ফিফার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন সাংবাদিকসহ ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তবে এখন পর্যন্ত তার সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে শনিবার দুপুরে দিকে তার আইনজীবীর করা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ক্রীড়াঙ্গনের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে শনিবার (১৫ এপ্রিল) বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফিফার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মুখ খুলেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তার দাবি, ফিফার রায় ‘ত্রুটিপূর্ণ ও অনুমাননির্ভর’। একই সঙ্গে ফিফার এই রায়কে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলেও আখ্যায়িত করেছেন কাজী সালাউদ্দিন।
কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘আমি একটা জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। তবে আমাদের দুইজন ভাইস প্রেসিডেন্ট দেশের বাইরে আছেন। তাই আমি সভা ডাকতে পারিনি। তারা কাল-পরশু দেশে এসে পৌঁছাবেন। সবাই আসলে পরশুদিন আমরা বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেব। এরপর আপনাদের জানিয়ে দেব পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে। আপাতত ফিফা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা সেখানেই আছি। বাফুফে কি সিদ্ধান্ত নেবে, তার জন্য সবাইকে দুদিন অপেক্ষা করতে হবে। সোমবার (১৭ এপ্রিল) ফিফার অফিস খুলবে। আমি ফিফার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবো। এরপর আমরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিব, আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে।’
তার দাবি, ‘ওরা যখন জুরিখে গিয়েছিল, তখন বুঝেছিলাম যে একটা কিছু চলছে। তখনো অফিশিয়ালি আমাকে কেউ জানায়নি। এখনও অফিশিয়ালি আমি ফিফা থেকে কোনো চিঠি পাই নাই।’
বাফুফে বসের ভাষ্য, ‘ওরা (ফিফার এথিকস কমিটি) কিন্তু বলে নাই আর্থিক অনিয়ম। রিপোর্টে আর্থিক অনিয়ম বলা হয়নি। ওরা কোড অব এথিকস এবং রেসপনসিবিলিটি নিয়ে বলেছে। অবশ্য, যাই বলা হয়েছে, সবই এখানে আসবে। লুকানোর কিছু নাই। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলার আগে আমার সবার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমার সব ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সিনিয়র মেম্বারদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সিদ্ধান্ত যেটা হবে, সেটাই আমি সবাইকে জানাবো।’
কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে অনিয়মের যে অভিযোগ ওঠে আসছিল নানা মহল থেকে তার সত্যতার পক্ষে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলো ফিফা। দুঃখজনক এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে দেশের ফুটবল পড়লো সংকট থেকে গভীর সংকটে।
নারী ফুটবল দলের মিয়ানমার সফর বাতিল হওয়ার পর থেকে এমনিতেই আলোচনায় ছিল বাফুফে। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল বাফুফের মধ্যেই। কিন্তু সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন এক বক্তব্য দিয়ে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে। পরে এর মধ্যে জড়িয়ে পড়েন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপিও।
কাজী মো. সালাউদ্দিনের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ ছিল বলে সরকারের উচ্চমহলও সেটা ভালোভাবে নেয়নি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিও একহাত নিয়েছেন কাজী মো. সালাউদ্দিনকে। কেন জাতীয় নারী ফুটবল দলকে মিয়ানমার পাঠানো হয়নি, কেন সরকারকেও দোষারোপ করা হলো- এসব খতিয়ে দেখতে সংসদীয় কমিটি তদন্ত করার নির্দেশও দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে।
বাফুফে সভাপতির এক বক্তব্যে যখন চারদিকে আগুন জ্বলছে তখন সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগের নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনা। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থার ওপর দিয়ে ঝড় শুরু হলো। এ ঝড় সামলানো কঠিন হতে পারে কাজী মো. সালাউদ্দিনের জন্য। কারণ, বাফুফেতে তিনি মূলত বন্ধুবিহীন। বাফুফের নির্বাহী কমিটির অনেকেরই অভিযোগ, কাজী মো. সালাউদ্দিন সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন।
বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ফিফার এই কঠিন সিদ্ধান্ত হঠাৎ করেই আসেনি। এর আভাস মিলছিল অনেকদিন ধরেই। ফিফা বেশ কয়েক বছর আগে থেকে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে অনেক বিষয়ে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পর ফিফা অবশেষে এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে অভিযোগের শুনানির জন্য বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ও আরও তিনজন বেতনভুক্ত কর্মকর্তাকে জুরিখে সদর দপ্তরে ডেকেছিল ফিফা। সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে ফিফার স্বাধীন এথিকস কমিটির বিচারিক চেম্বার বাফুফে সাধারণ সম্পাদককে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে রায় দেন।
তহবিল তছরুপ, ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও মিথ্যাচারসহ বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগের তদন্ত করেছিল ফিফা। সবকিছুতেই অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ফুটবলের ওপর নেমে এলো এই অমানিশা।