- আজ বুধবার
- ২৫শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
- ৯ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
- ১২ই মহর্রম ১৪৪৭ হিজরি
গাজীপুর টিভি ডেস্ক | ১৭ মার্চ ২০২২ | ১২:১১ অপরাহ্ণ
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গাজীপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে শতাধিক ঘর ভেঙে ফেলা হয়। আজ সেসব ভাঙা ঘর পরিদর্শন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকায় গিয়ে ভেঙে ফেলা ঘরগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) অঞ্জন কুমার সরকার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম সাদিক তানভীর, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নাজনীন শামীমা ও সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহরিয়ার মাহমুদ রনজু উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গাজীপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামানকে এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুন সরদার ও গাজীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বারেক মিয়া।
প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কর্মকর্তা বলেন, গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে দায়িত্বশীলদের যতটুকু গুরুত্ব দিয়ে ভূমিকা রাখার দরকার ছিল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কেউই তা করতে পারেননি।
একজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তার ইউনিয়নে গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করা হলেও এ বিষয়ে তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। নির্মাণকাজ শুরু হলেও তাকে কিছু জানানো হয়নি। ইউএনও এককভাবে তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর শুরু হয় গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প। দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করার জন্য এ ঘরগুলো তৈরিতে কোনো ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। দেখভালে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দৃষ্টিনন্দন রঙিন টিনের দুই কামরার সেমিপাকা ঘর হবে। ঘরের আয়তন হবে দৈর্ঘ্যে ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি ও প্রস্থে ২২ ফুট ৬ ইঞ্চি। রান্নাঘর ও শৌচাগার থাকবে। প্রতি ১০ ঘরের জন্য একটি নলকূপ। সব মিলিয়ে বাড়িপ্রতি খরচ ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা। ইটের সংখ্যা, সিমেন্ট ও বালুর পরিমাণও বলে দেওয়া হয় নকশা মোতাবেক। নির্দেশিকা অনুসারে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে গাজীপুরে তেমনটি দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। প্রকল্পের জন্য একটি কমিটি থাকলেও কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো সমন্বয় করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ঘর নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় সম্প্রতি গাজীপুর সদর উপজেলার তিন ইউনিয়ন এবং সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডে শতাধিক ঘর ভেঙে ফেলা হয়। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সাদিক তানভীর বলেন, নিম্নমানের উপকরণ ও সঠিক মালামাল দিয়ে তৈরি না হওয়ায় সম্প্রতি শতাধিক ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, গাজীপুর সদর উপজেলায় ১৬০টি ঘর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। নতুন আরও ৩০০ ঘর নির্মাণের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এজন্য জমি খোঁজা হচ্ছে। শিগগির এসব ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সঠিক তদারকির অভাবে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী এবং পরিমাণের তুলনায় কম সামগ্রী দিয়ে ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছিল। এসব ঘর নির্মাণকালে সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা দায়িত্বশীল কাউকে দেখা যায়নি। ঘরগুলো স্থানীয় লোক দিয়েও করা হয়নি।
এ প্রকল্পে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়াও উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সদস্য হিসেবে ছিলেন।
জানতে চাইলে গাজীপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহরিয়ার মাহমুদ রনজু বলেন, তিনি অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকায় সবগুলো সাইট ভিজিট করতে পারেননি। তার অফিসে জনবল সংকটের কারণে সবসময় নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের সবকিছুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এসব বিষয়ে তিনিই সব বলতে পারবেন।