- আজ বুধবার
- ১০ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
- ২৩শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
- ২২শে শাওয়াল ১৪৪৬ হিজরি
গাজীপুর টিভি ডেস্ক | ০৭ এপ্রিল ২০২২ | ৪:৪৩ অপরাহ্ণ
ভারতের রাজধানী দিল্লির দক্ষিণাঞ্চলে মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হিন্দুদের পবিত্র উৎসব নবরাত্রি চলাকালীন সব ধরণের মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সেখানকার পৌর কর্পোরেশন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজেপি পরিচালিত দক্ষিণ দিল্লি কর্পোরেশনের মেয়র বলছেন, নবরাত্রির সময় বেশীরভাগ হিন্দুই মাছ-মাংস, এমনকি পেয়াজ রসুনও খান না। তাই খোলা জায়গায় মাছ-মাংস বিক্রি হতে দেখলে সেই সব হিন্দুদের অস্বস্তি হয়। সেকারণেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে মেয়রের এই নির্দেশ নিয়ে রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সাধারণ মানুষ, যারা মাছ-মাংস খান, তারা বলছেন এভাবে তাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক হচ্ছে না। যদি কারও নিরামিষ খেতে ইচ্ছা হয়, তিনি খেতেই পারেন, কিন্তু মাংসের দোকান কেন বন্ধ থাকবে এমন প্রশ্ন তাদের।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র চৈত্র নবরাত্রি শুরু হয়েছে গত ২ এপ্রিল। এই উৎসব চলবে চলতি মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত। তারা মনে করেন, এ সময় তাদের আরাধ্য দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন।
মূলত উত্তর আর পশ্চিম ভারতের হিন্দুদের একাংশ এই উৎসব পালন করেন। তারা কেউ এ সময় উপোস করেন অথবা কঠোরভাবে নিরামিষ খাবার খান এমন কি অনেকে পেঁয়াজ বা রসুনও খান না।
বিজেপি পরিচালিত দক্ষিণ দিল্লির মেয়র মুকেশ সুরিয়ানের দাবী, দিল্লির প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষই এসব কঠোর নিয়ম পালন করেন। মাছ-মাংস ইত্যাদি বিক্রির দৃশ্য দেখে তাদের যেন অস্বস্তিতে পড়তে না হয় সেজন্যই এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেয়র বলেন, মানুষের একটা আবেগ আছে যে নবরাত্রির সময় আমিষ খাবার বা রসুন, পেঁয়াজও বাড়িতে ঢোকে না। প্রায় ৯৯ শতাংশ দিল্লিবাসীই এটা মেনে চলেন।
এই বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানে রসুন পেয়াজও খাওয়া হয় না, তখন দক্ষিণ দিল্লির মাংসের দোকানগুলোও বন্ধ রাখা উচিত। এই নির্দেশ যারা মেনে চলবেন না, তাদের জরিমানা করা হবে বলে জানান মুকেশ সুরিয়ান।
তিনি আরও বলেন, এরপর থেকে নীতি বদল করে লাইসেন্স দেওয়ার সময় এই শর্ত রাখা থাকবে যে নবরাত্রির সময় মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ থাকতে হবে। বিজেপির মেয়রের এই নির্দেশের পর রাজনৈতিক মহলে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত পূর্বতন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, সংখ্যাগুরুর খাদ্যাভ্যাসই যদি এই নির্দেশের কারণ হয়, তাহলে কাশ্মীরের সংখ্যাগুরু মুসলিমরা যখন রোজা রাখেন, তখন অমুসলিম কাউকে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো উচিত।
আবার তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র এক টুইট বার্তায় বলেন, আমি দক্ষিণ দিল্লিতে থাকি। সংবিধান আমাকে যেমন, যখন খুশি মাংস খাওয়ার অধিকার দিয়েছে, তেমনই দোকানিদেরও স্বাধীনতা আছে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার।
দক্ষিণ দিল্লির আইএনএ মার্কেটে মাছ-মাংসের এক দোকানি বলেন, পৌর কর্পোরেশন যদি নির্দেশ দেয় তাহলে মানতেই হবে। কিন্তু আমার কাছে যে কয়েক লাখ টাকার মাছ-মাংস মজুত হয়ে আছে, তার কী হবে?
তিনি বলেন, আমার কাছে যে কয়েকজন কাজ করে তাদের দৈনিক আয় গড়ে ২০০ টাকা। তারা এই ছয় দিন কাজ না করলে খাবে কী? আরেক দোকানী বলেন, আমার দোকান থেকে নানা হোটেল রেস্তোরাঁয় মাংস যায়। সেগুলো বন্ধ হয়ে গেলে কী করে চলবে আমার?
দক্ষিণ দিল্লির বাসিন্দা শুভাশীষ দত্ত বলেন, তার খাদ্যাভ্যাস কী হবে, সেটা কেন অন্য কেউ ঠিক করে দেবে?
তিনি বলেন, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে আমি নিরামিষ খাব না আমিষ খাব, সেটা সম্পূর্ণভাবে আমার সিদ্ধান্ত, আমার ব্যক্তিগত পছন্দ। এটা যদি কেউ আমার ওপর চাপিয়ে দেয়, খারাপ তো লাগবেই।
দক্ষিণ দিল্লিরই আরেক বাসিন্দা শ্রেয়সী সোম চৌধুরী বলেন, মাছ মাংসের দোকান বন্ধ থাকলে তাকে অনলাইনে আমিষ খাবারগুলো আনাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা তো বাঙালী হিন্দু। নবরাত্রি আমরা তো পালন করি না, সবকিছুই খাই। এখন দোকানগুলো যদি বন্ধ থাকে তাহলে অনলাইনেই আনাতে হবে। এতে একটু অসুবিধা তো হবেই।
দিল্লির বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট উৎপল ঘোষ বেনারসে মামাবাড়িতে জন্মালেও তার বড় হয়ে ওঠা দিল্লিতেই।
তিনি বলেন, ছোট থেকেই তো নবরাত্রি দেখছি। কোনদিন দেখিনি যে, নবরাত্রির সময় মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ রাখা হচ্ছে। নির্দেশটা দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে এর পেছনে রাজনীতি আছে।
পূর্ব দিল্লির মেয়রও একইভাবে সেখানকার মাংস বিক্রেতাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যে, তারাও যেন নবরাত্রির সময় দোকান বন্ধ রাখেন। তবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দিল্লি সরকার এ ধরনের কোন বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।