• আজ শনিবার
    • ২৫শে শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
    • ৯ই আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
    • ১৩ই সফর ১৪৪৭ হিজরি

    সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডে’র অভিযোগপত্র ১৫ দিনের মধ্যে দেয়া হবে : জিএমপি কমিশনার

    সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডে’র অভিযোগপত্র ১৫ দিনের মধ্যে দেয়া হবে : জিএমপি কমিশনার

    গাজীপুর টিভি ডেস্ক | ০৯ আগস্ট ২০২৫ | ৫:০৩ অপরাহ্ণ

    গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগ পত্র) দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান।

    এসময় তিনি, যথার্থ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার কারণে তুহিন হত্যায় ব্যর্থতা দায় নিজের কাঁদে নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ও তিনি নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

    জিএমপি কমিশনার শনিবার (৯ই আগস্ট) দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর ওয়্যারলেস গেট এলাকায় জিএমপির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন।

    জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেছেন, সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না৷ আমাদের ব্যর্থতা ও জনবল স্বল্পতা রয়েছে। পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন করা সম্ভব হয় না। এখানে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হয়। অপরাধ দমনে তিনি পুলিশকে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।

    জিএমপি কমিশনার বলেন, “সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের ওপর ছিল। আমরা প্রিভেন্ট করতে পারিনি। প্রিভেনশন সব সময় করা যায় না। বিশ্বের কোনো দেশ ক্রাইম একেবারে শূন্যতে নিয়ে আসতে পারেনি। তাই, আমাদের শত চেষ্টার পরেও ক্রাইম হয়ে যেতে পারে। যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।”

    পুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, ঘটনার দিন এই ঘটনার প্রথম ভিকটিম বাদশা মিয়া স্থানীয় একটি এটিএম বুথ থেকে ২০/২৫ হাজার টাকা তোলেন। বিষয়টি দেখে তাকে ফাঁসানোর জন্য গোলাপি বাদশাকে হানি ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করেন। গোলাপির সাথে কথাবার্তার এক পর্যায়ে বাদশা মিয়া বিষয়টি বুঝতে পারেন, যে তাকে হানি ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপর দুজনের কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং বাদশা মিয়া গোলাপিকে ঘুসি মারেন। সিসিটিভি ফুটেজও বিষয়টি দেখা যায়।

    পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, গোলাপিকে ঘুসি মারার পরপরই আগে থেকে উৎপেতে থাকা গোলাপির সহযোগীরা ৬/৭ জন এগিয়ে এসে চাপাতি দিয়ে বাদশা মিয়াকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। তখন বাদশা মিয়া সেখান থেকে পালিয়ে যাবার সময় এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। সাংবাদিক তুহিনের ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি আসামিরা দেখে ফেলে। তখন আসামীরা বুঝে যায় যে, এই ভিডিওর মাধ্যমে তাদের অপরাধ মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বে।

    তিনি বলেন, তারপরে আসামিরা সাংবাদিক তুহিনের ভিডিওটি কেড়ে নেয়ার জন্য তার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায় এবং তাকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে সাংবাদিক তুহিন একটি চা স্টলে আশ্রয় নিলে তাকে সেখানেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

    কমিশনার আরো বলেন, ঘটনার পর পরই আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। ফুটেজ দেখে আমরা ৮ জনকে চিহ্নিত করেছি। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করেছি৷ বাকি একজনকেও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে৷

    জিএমপি কমিশনার জানান, সাংবাদিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার আসামীরা হলেন, জামালপুরের মেলান্দহ থানার মাহমুদপুর এলাকার মোবারকের ছেলে ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান (৩৫), তার স্ত্রী গোলাপী (২৫), পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মো: স্বাধীন (২৮), খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার ময়লাপোতার হানিফের ছেলে আল আমিন (২১), কুমিল্লার হোমনা থানার অনন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে শাহজালাল (৩২), পাবনার চাটমোহর থানার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিনের ছেলে মো. ফয়সাল হাসান (২৩) এবং সুমন নামের একজন।

    তিনি আরো জানান, হত্যার প্রধান আসামি কেটু মিজানের নামে ১৫টি, আল আমিনের নামে ২টি, স্বাধীনের নামে ২টি, শাহজালাল এর নামে ৮টি এবং ফয়সাল হাসানের নামে ২টি মামলা রয়েছে। আসামী পারুল আক্তার ওরফে গোলাপি কেটু মিজানের স্ত্রী, যিনি হানি ট্র্যাপ কার্যক্রমের সাথে জড়িত।

    তিনি আরো বলেন, সংঘবদ্ধ চক্রের অপরাধের চিত্র ধারণ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন সাংবাদিক। এ ঘটনায় আমাদের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ আছেন, প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী আছে। সমস্ত তথ্য প্রমান রয়েছে। তুহিনের মরদেহের ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তী সাপেক্ষে আমরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই আদালতে চার্জশিট দিতে পারব। আমরা আশা করি দ্রুত সময়ে তাদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সাজার সংস্কৃতি নিশ্চিত করা গেলে ক্রাইম দমন করা যাবে। আসামিরা যদি নাও স্বীকার তবে, এভিডেন্সই তাদের অপরাধ প্রমাণ করবে।

    প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টা দিকে একটি মার্কেটের ভিতর প্রকাশ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে তিনি। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

    জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্কমর্তা (ওসি) শাহীন খান জানান,সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এর একটি মামলার বাদী হয়েছেন, নিহত সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই মো: সেলিম। অপর একটি মামলার বাদী, তুহিন হত্যার আগে সংগঠিত আরেকটি হামলার ঘটনায় আহত বাদশা মিয়ার ভাই। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

    নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের জানাজার নামাজ গত শুক্রবার বাদ জুমা গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার যেখানে তাকে হত্যা করা হয়, সেখানেই ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে ময়মনসিংহে তার গ্রামের বাড়ীতে দাফন সম্পন্ন হয়।

    Comments

    comments

    আর্কাইভ

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫
    ১৬১৭১৮১৯২০২১২২
    ২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
    ৩০৩১