- আজ রবিবার
- ৭ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
- ২০শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
- ১৯শে শাওয়াল ১৪৪৬ হিজরি
গাজীপুর টিভি ডেস্ক | ০৬ জুন ২০২৪ | ৮:২১ অপরাহ্ণ
ভারতের লোকসভায় বিরোধীনেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীকে দেখতে চায় কংগ্রেস। অধিকাংশ কংগ্রেস নেতা মনে করেন, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হিসেবে রাহুলেরই বিরোধীনেতার দায়িত্ব নেওয়া উচিত। এমনটি হলে তিনি ২০২৯ এর লোকসভা নির্বাচনে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন। এখন রাহুল এই প্রস্তাবে রাজি হবেন কি না, সেটিই মূল প্রশ্ন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, বুধবার (৫ জুন) দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাড়িতে ‘ইনডিয়া’ জোটের নেতাদের জমায়েতে এই প্রসঙ্গে কথা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বৈঠকে কোনও আলোচনা না হলেও বিরোধীনেতাদের অনেকেই ঘরোয়া ওই আড্ডায় মত দিয়েছেন যে, রাহুলেরই বিরোধীনেতা হওয়া উচিত।
বৈঠকের আগে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, পরের বার যদি ইনডিয়া জোট সরকার গঠন করতে পারে, আর সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে যদি রাহুল রাজি হন, তাতে তাদের আপত্তি থাকবে না।
কংগ্রেস নেতাদের মতে, বিরোধীনেতাকে সিবিআই প্রধান, লোকপাল, মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার নিয়োগের বাছাই কমিটির বৈঠকে যেতে হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও প্রধান বিচারপতি থাকেন। রাহুল বিরোধীনেতা হলে মোদির মুখোমুখি বসে নিজের মতামত বা আপত্তি জানাতে পারবেন।
তবে কংগ্রেসের আরেকটি অংশের মত হল, রাহুল কোনওদিনই সারাদিন সংসদে বসে থাকার ব্যক্তি নন। ফলে তার পক্ষে বিরোধীনেতার ভূমিকা পালন করা কঠিন। সংসদে বসে থাকার বদলে তিনি ভারত জোড়ো যাত্রার মতো প্রচারে বা সংগঠন মজবুত করার কাজে বেশি আগ্রহী। এবারের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস গতবারের চেয়ে ৪৭টি আসন বেশি পেয়েছে। ভোটের হারও বেড়েছে। কিন্তু ৯৯টি আসন জিতলেও বহু রাজ্যে দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট।
২০১৪ ও ২০১৯ এর নির্বাচনের পরে লোকসভায় কোনও বিরোধীনেতাই ছিলেন না। কংগ্রেস বৃহত্তম বিরোধী দল হলেও লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা বিরোধী দলনেতার তকমা পাননি। কারণ, তার জন্য কংগ্রেসকে লোকসভার মোট আসনের ১০ শতাংশ জিততে হতো। প্রথম মোদি সরকারে মল্লিকার্জুন খাড়গে ও দ্বিতীয় মোদী সরকারে অধীর চৌধুরী বৃহত্তম বিরোধীনেতার পদে ছিলেন।
এবার অধীর হেরে গেছেন। তার সঙ্গে মধ্যপ্রদেশে দিগ্বিজয় সিং, ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল, রাজস্থানের সি পি জোশি, হিমাচলে আনন্দ শর্মার মতো প্রবীণ নেতারা হেরে গেছেন। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথের ছেলে নকুল নাথ, রাজস্থানে অশোক গহলৌতের ছেলে বৈভব গহলৌত, হিমাচলের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের ছেলে বিক্রম আদিত্য সিং হেরে গেছেন। রাজবব্বর, কান্তিলাল ভুরিয়ার মতো পরিচিত মুখও হেরেছেন।
ফলে, রাহুল রাজি না হলে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা বিরোধীনেতা কে হবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পুরনো সংসদ সদস্যদের মধ্যে শশি থারুর, মণীশ তিওয়ারি ও কে সি বেণুগোপাল লোকসভায় জিতে এসেছেন। বেণুগোপাল রাহুলের সবচেয়ে আস্থাভাজন হলেও, তিনি এখন কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক। ফলে তাকে লোকসভার বিরোধীনেতার দায়িত্ব দিলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে সরানোর দাবি উঠতে পারে।
গত লোকসভায় কংগ্রেসের উপ-দলনেতা গৌরব গগৈও ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে সবাইকে পিছনে ফেলে দিতে পারেন। বিশেষত কংগ্রেস এবার আসামে তিনটি আসন জেতা ছাড়াও উত্তর-পূর্বের মণিপুর, নাগাল্যান্ডে সব আসন জিতেছে। আমেথিতে স্মৃতি ইরানিকে হারিয়ে আসা কিশোরীলাল শর্মা আজ ১০ জনপথে এসে সনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে কিশোরীলালকে বিরোধীনেতার দৌড়ে কেউ রাখছেন না।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে রাজনীতিতে অভিষেক হওয়ার পর থেকে ৫৩ বছর বয়সী রাহুল গান্ধী তার দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কোনও সাংবিধানিক পদে থাকেননি। গত বছর মানহানির মামলার কারণে তার সংসদ সদস্য পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট তার পদ ফিরিয়ে দেয়।
সূত্র: আনন্দবাজার