- আজ শুক্রবার
- ৩রা শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
- ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
- ২০শে মহর্রম ১৪৪৭ হিজরি
গাজীপুর টিভি ডেস্ক | ১৭ জুলাই ২০২৫ | ৫:৫০ অপরাহ্ণ
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান। যদিও মার্চ টু গোপালগঞ্জ ঘোষণা করার পর থেকেই নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে জুলাইযোদ্ধা এনসিপি নেতাদের গোপালগঞ্জে ঢুকতে না দেয়ার কথা বলে এবং তাদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অন্তত ৬ শতাধিক ফেসবুক একাউন্টে হাসনাত, নাহিদ, সারজিসদের হত্যা করার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হুমকি প্রদান করে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায়। যাতে স্পষ্ট হয়, বুধবারের সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট।
গত মঙ্গলবার রাতে গোপালগঞ্জ কাশিয়ানী, টুংগীপাড়া, টেকেরহাট, এলাকায় এনসিপির সমাবেশের বিপক্ষে মশাল মিছিল করে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তখন পর্যন্ত প্রশাসন ছিল নীরব। প্রশ্ন উঠে গোপালগঞ্জ জেলা কি বাংলাদেশের বাইরে? তাহলে সেখানে নিষিদ্ধ ঘোষিত গণহত্যাকারীরা একজোট হয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কীভাবে লিপ্ত হয়? নাশকতার পূর্বে কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হয় না?
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কর্মসূচি জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ভোর বেলায় গোপালগঞ্জ সদরে পুলিশের গাড়িতে আগুন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাড়ি বহরে হামলা-ভাঙচুরের মাধ্যমে নাশকতা শুরু করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। জুলাইযোদ্ধা ও এনসিপি নেতাদের মার্চ টু গোপালগঞ্জ পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পথে পথে বাধা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়, নির্বিচারে গাছের গুড়ি কেটে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা ব্লক করে রাখে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দুপুর পৌনে ৩টার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে এনসিপির সভার পূর্বেই পুলিশ প্রশাসনের সামনে স্টেজ ভাঙচুর চালায় তারা। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে সবাই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখে জুলাই যোদ্ধারা। সংক্ষিপ্ত সভাশেষে ঢাকায় ফেরার পথে এনসিপি নেতাদের উপর দেশীয় অস্ত্র রামদা, ইট-পাটকেল ও ককটেল বোমা ছুড়ে বর্বরোচিত হামলা চালায় আওয়ামী লীগ যুবলীগের ক্যাডার বাহিনী। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহরে থাকা শতাধিক যানবাহন আহত হয় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়েও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী। পুলিশের সাথে হামলাকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিপথগামীদের অনেকেই আহত হয়।
ঘরে বসে ছিল না আওয়ামী সমর্থিত একজনও: এনসিপিকে রুখতে গোপালগঞ্জে আওয়ামী সমর্থিত নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, আবাল বনিতা সকলে ছিল রাজপথে। পথে পথে বেড়িকেড, জায়গায় জায়গায় আগুন, সবার হাতে ঢাল তলোয়ার, টেঁটা, বল্লম, সরকি, লাঠি, রড, বাটাম, দা-ছ্যান্দা, বড় ঐশী ও লম্বা লম্বা ধারালো অস্ত্রসহ চলে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল। ফোনে ফোনে যোগাযোগ চলে সব জায়গায়।
পিঁপড়ের সারির মতো নারীদের নেতৃত্বেও হয়েছে মিছিল। বয়স্ক নারীদেরকেও মিছিলে দেখা গেছে। ঘরে ছিল না বিবাহযোগ্যা মেয়েরাও। তারা যে কোনো মূল্যে এনসিপির কোনো নেতাকে বের হতে দিবে না গোপালগঞ্জ থেকে। সবার মুখে ছিল একটাই সেøাগান ‘যাবে জীবন চলে যাক এনসিপির সব নিপাত যাক’। ‘একটা একটা এনসিপি ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘কে বলেরে হাসিনা নাই, হাসিনা সারা বাংলায়’।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমালোচনায় সবাই: এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির অঙ্গ সংগঠনের সবাই দলবদ্ধ আক্রমণ চালিয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের ওপরও করেছে ন্যক্কারজনক হামলা। দেশের সাধারণ মানুষ দুদিন আগে থেকেই এমন কিছু ঘটতে পারে আভাস দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউই বিষয়টি নিয়ে ভাবেননি। না পুলিশ না গোয়েন্দা সংস্থার কেউ সবাই ছিলেন ঘুমিয়ে। আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি সামান্যও। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষও সমালোচনা করছেন। ঘটনার পরপরই অবরুদ্ধ অবস্থায় থেকে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, গোপালগঞ্জে তাদের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। পুলিশ কি করেছে? দলটির আরেক নেতা সারজিস আলম সেখানে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। এক পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, ‘গোপালগঞ্জে খুনি হাসিনার দালালরা আমাদের উপরে আক্রমণ করেছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে নাটক দেখছে, পিছু হটছে’।
এ বিষয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ পুলিশ (আইজিপি) মোহাম্মদ বাহারুল আলম বলেন, গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি ধৈর্যের সঙ্গে সামলানোর চেষ্টা করছে পুলিশ।
কিভাবে এই অতর্কিত হামলা? পুলিশ কিংবা গোয়েন্দাবাহিনীর কেউ কি কিছু জানতে পারেনি? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, উচ্ছৃঙ্খলতা যা হয়েছে, সেটা যতটুকু সম্ভব আমরা ধৈর্যের সাথে প্রশমন করার চেষ্টা করছি, আমরা এখন রিইনফোর্সড (আরো পুলিশ সদস্য পাঠানো) করছি, পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। আমরা লিথ্যাল (প্রাণঘাতী অস্ত্র) কোনো কিছু ব্যবহার করছি না, তাই আমাদের একটু সময় লাগছে।’