- আজ বুধবার
- ১৮ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
- ২রা জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
- ৪ঠা মহর্রম ১৪৪৭ হিজরি
গাজীপুর টিভি ডেস্ক | ১১ ডিসেম্বর ২০২১ | ৪:৫৪ অপরাহ্ণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্য সাতদিনের মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ প্রতিহত করবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, জননেত্রীকে নিয়ে যারা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে তাদের যেখানে পাবে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকমীরা প্রতিহত করবে। যেন ভবিষ্যতে তারা আর এ কাজ করতে না পারে।
আজ শনিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে “ভবিষ্যতের বাংলাদেশ ও তারুণ্যের ভাবনা’’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, রাজনীতির মধ্যে শালীনতাবোধ থাকা উচিত। বিএনপির মধ্যে কখনো শালীনতা ছিলো না। অশুভ ও অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করে দল গঠন করার ফলে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষাও নাই। আজকে শুধু আলাল নয়, বিএনপির শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়াও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করতেও পিছপা হননি। বিএনপি নেতা তারেক রহমান লন্ডনে বসে কর্মীসভা করে জাতির পিতার নাম নেওয়ার সময় শ্রদ্ধা নিয়ে পুরো নামটা উচ্চারণ করে না। এরা কত বড় অসভ্য, অশিক্ষত হলে এসব করতে পারে। জননেত্রী শেখ হাসিনা তার (তারেক রহমানের) মায়ের বয়সী, তার পুরো নামটাও নেয় না। বিএনপি নামক দলটি শালীনতা বিবর্জিত, অসভ্য, কুরুচিপূণ দল- এটা বারবার প্রমাণিত।
তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ডা. মুরাদের কথা আসার পরে অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে। তাকে জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, আওয়ামী লীগ কখনো অরুচিকর কথাবার্তা, অশালীন বক্তব্য সমর্থন করে না। বিএনপির আলাল যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে, এ নিয়ে একটি মামলা হয়েছে। মির্জা ফখরুল সে মামলার নিন্দা জানিয়ে প্রকারান্তরে আলালের বক্তব্যের প্রতি সমথন দিয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।
হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য বিএনপি নেতারা বিদেশিদের ডেকে কান্না করছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়া মানবতা দেখিয়েছিন, এমন একটা নিদর্শন দেখাতে পারবেন? ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ নিধন শুরু করেছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা (বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে) গণহত্যা চালিয়ে মানবতা দেখিয়েছেন?
বিএনপি সরকারের প্রসঙ্গ টেনে মাহবুব-উল আলম হানিফ আরও বলেন, অজস্র মেয়ে তখন পাশবিকতার শিকার হয়েছে। বিএনপির অত্যাচারে মানুষ ঘরে থাকতে পারেনি। আর এখন চিকিৎসার কথা বলে সকাল-বিকাল কান্না করছেন। প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজনীতি করে এখন মানবতার কান্না করছেন। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত।
চারদলীয় জোর সরকারের সময়কালের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সিএমএইচে আইভী রহমানকে দেখতে গিয়েছিলেন। তাকে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাকে আট কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়েছিল। কত পৈশাচিক আচরণ করেছেন। একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর নিষ্ঠুর পৈশাচিক রসিকতা করলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বহু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছেন। পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। লজ্জা হয় না আপনাদের। তখন কোথায় ছিলো গণতন্ত্র। এদেশের জনগণ তথাকথিত গণতন্ত্রকে ধিক্কার জানিয়েছে, ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
হানিফ বলেন, কারো দয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হয়নি। কোনো এক মেজরের হুইসেলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নি। আমরা যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশ স্বাধীন করেছি। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬’র ছয় দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সোপান রচিত হয়েছিলো। বাঙালির মুক্তির পথ রচিত হয়েছিলো। স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতার ২১ বছরের আন্দোলনের পথ মসৃণ ছিলো না। রাজনৈতিক জীবনের ১৩ বছর তিনি কারাবরণ করেছেন। বারবার পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভয়-ভীতি দেখিয়েও তাকে দমাতে পারেনি। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দিয়েছে। ছয় দফাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু বাঙালি জেগে উঠেছিলো। যে কারণে জাতির পিতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু আজীবন স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস, আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। পঁচাত্তর পরবর্তী স্বাধীনতার ইতিহাসকে বারবার বিকৃত করা হয়েছে। ৬৯’র গণঅভ্যূত্থানের পর বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু জানতেন, স্বাধীনতার জন্য জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া বিপ্লব সম্ভব নয়। ম্যান্ডেট পাওয়ার জন্য সত্তরের নির্বাচনে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। রেসকোর্স ময়দানের ১৯ মিনিটের ভাষণে তিনি বাঙালিকে জাগিয়ে তুলেছেন। এটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ।
স্বাধীনতার চেতনার ওপর আঘাত করে বিএনপি ক্ষত সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান না কি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সিলেটে আমি বহু সম্মুখযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলেছি। জিয়াউর রহমান সরাসরি যুদ্ধ করেছেন তার কোনো তথ্য পাইনি। পঁচাত্তর পরবর্তী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে প্রতিটি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান প্রমাণ রেখে গেছেন যে, তিনি পাকিস্তানের এজেন্ট। সাড়ে ১২ হাজার রাজাকার, আল বদরকে ক্ষমা করে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তাকে এ ক্ষমা করার অধিকার কে দিয়েছিলো?
আওয়ামী লীগের এ নেতাক বলেন, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নিষিদ্ধ জামায়াত, রাজাকার, আল বদরদের মুক্তি দিয়েছিলো। মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি স্বাধীন রাষ্ট্রে মুক্তিযোদ্ধাদের চিনতেন না। যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তাকে প্রধানমন্ত্রী বানালেন। মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রমহানি হওয়া মা-বোনদের সঙ্গে তিনি বেইমানি করেছেন। রাজাকার শিরোমণি গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করেন। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেন। ১৫ আগস্ট নাজাত দিবস পালন করেছেন। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে মুজিব হত্যার বিচার বন্ধ করেছেন। বিএনপি নেতারা বিচারের কথা বলেন। শুধু বিচার বন্ধ নয়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসনও করেন। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেন পাকিস্তানী আদর্শে বিশ্বাসী জিয়াউর রহমান।
হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অভূতপূর্ব সফলতা পেয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্রের জন্য যা যা প্রায়োজন সব করা হচ্ছে। এসব বাস্তবায়ন হলে দেশে যুগান্তকারী জাগরণ তৈরি হবে। ২০৪১ সালের আগে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতা, বিচক্ষণতা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে অস্বাভাবিক মাত্রায় লোভ-লালসা ঢুকে গেছে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রথমে পুরোপুরি দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, সে ইতিহাসকে ধারণ করতে হবে। দেশের বড় একটি অংশ স্বাধীনতার চেতনা মনে ধারণ করে না। বুঝে না বুঝে মানুষ ধর্মান্ধ হচ্ছে। ধর্মান্ধ নয়, আমাদের ধর্মপরায়ন হওয়া দরকার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সততা, ন্যায়নীতি, মূল্যবোধ তৈরি করতে হবে।
বিএনপি দেশের মানুষের মাঝে বিভাজন তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতি আজ দুই ধারায় বিভক্ত। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি। এ বিভাজন দূর না হলে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়া কঠিন হবে। সোনার বাংলা গড়তে হলে অশুভ শক্তিকে নির্মূল করতে হবে। এদেশের নাগরিক হলে মুক্তিযুদ্ধকে মানতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে হবে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | |||
৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ |
১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ |
১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ |
২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |