• আজ বুধবার
    • ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
    • ১৪ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
    • ১৩ই জিলকদ ১৪৪৬ হিজরি

    ‘নৌপরিবহনে যাত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত নাজুক’

    | ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ | ২:১৪ অপরাহ্ণ

    দেশের নৌপরিবহনে যাত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি ‘অত্যন্ত নাজুক’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ।

    ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক সংখ্যক হতাহতের ঘটনার পর নৌপথের নানাদিক তুলে ধরে তিনি এ তথ্য জানান।

    তার কথায়, আগুনের সূত্রপাত যে কোনোভাবে হতে পারে। তবে আগুন নির্বাপকসহ যাত্রীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনী ব্যবস্থা লঞ্চগুলোয় থাকে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। নৌপথে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বরাবরই অবহেলিত।

    সুগন্ধায় লঞ্চে আগুনে এরই মধ্যে ৪১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। দগ্ধ আরও অনেকে হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। নিখোঁজদের সন্ধানে সুগন্ধার তীরে স্বজনদের আহাজারিও থামেনি। বাতাসে এখনো পোড়া দেহের গন্ধ। এরই মধ্যে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড ও ব্যাপক সংখ্যক হতাহতের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

    কীভাবে আগুন লাগলো, আগুন এত দ্রুত কীভাবে ছড়ালো, কৌতূহলী এসব প্রশ্নে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুনের সূত্রপাত লঞ্চের ক্যান্টিনে থাকা এলপি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে। তবে লঞ্চটির মালিকপক্ষের দাবি, লঞ্চের দোতলায় কোনো কিছুর বিস্ফোরণ থেকেই আগুনের সূত্রপাত।

    পরিবহন দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দুর্ঘটনার কারণ কী সেটা অনুসন্ধানে জানা যাবে। তবে লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে থাকা খাবারের ক্যান্টিন নকশাবহির্ভূত ও ঝুঁকিপূর্ণ।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী সাইফুন নেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, যে কোনোভাবে আগুন লাগতে পারে। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকলে হয়তো আগুন নেভানো যেতো। অথচ আমাদের দেশের লঞ্চগুলোতে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা একেবারেই অবহেলিত। আগুন লাগার পরে নেভানো বা এলার্ম দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু নৌপরিবহনে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত নাজুক। নিয়মিত লঞ্চে চেকিং, নিরাপত্তা ফিচারের কার্যকারিতা বা লাইফ গার্ড আছে কি না, সেগুলো মনিটরিং হয় না।

    তিনি বলেন, লঞ্চে হাতেগোনা কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। তবে এত বড় আগুন লাগার ঘটনা এটাই প্রথম। কেন আগুন লাগলো সেটা ইনভেস্টিগেশনের ব্যাপার। তবে জানা গেছে, ইঞ্জিন রুমের সঙ্গে থাকা রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। প্রতিটি লঞ্চেই ইঞ্জিন রুমের সঙ্গে রান্নাঘর থাকে, টি স্টল থাকে। লোকজন সেখানে চা-সিগারেট খায়। অথচ সেই ইঞ্জিন রুমেই ডিজেল থাকে, দাহ্য পদার্থ থাকে। এতে ঝুকিঁর ব্যাপারটা উপেক্ষিতই ছিল। সে কারণেই হয়তো এত বড় একটা দুর্ঘটনা দেখতে হচ্ছে।

    তিনি বলেন, ইঞ্জিন রুমের সঙ্গে ক্যান্টিন বা দাহ্য জিনিস রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মানে ডিজাইনে ত্রুটি। যেসব লঞ্চে এসব আছে, সেখানে অবশ্যই ডিজাইনে ত্রুটি আছে। সেগুলো দ্রুততম সময়ে ঠিক করতে হবে।

    এদিকে সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুনে ৪১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে আহত ৮১ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৬ জনের চিকিৎসা চলছে। ১৬ জনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, লঞ্চে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীসহ আট শতাধিক যাত্রী ছিলেন। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ঝালকাঠি সদরের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের গাবখান চ্যানেলে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটির ইঞ্জিন রুমে আগুনের সূত্রপাত। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে মধ্যরাতে প্রাণ বাঁচাতে যাত্রীদের অনেকেই মাঝনদীতে ঝাঁপ দেন।

    কাজী সাইফুন নেওয়াজ মনে করেন, সুগন্ধায় এ দুর্ঘটনা আমাদের অনেক বড় মেসেজ দিয়ে গেলো। আগুন লাগলে কীভাবে বের হতে হবে, ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে কি না বা অগ্নিনিরাপত্তা আছে কি না, এ বিষয়গুলো এখনই কঠোর নজরদারিতে আনা দরকার।

    Comments

    comments

    আর্কাইভ

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫১৬
    ১৭১৮১৯২০২১২২২৩
    ২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
    ৩১